
খুলশী এলাকার কলেজ ছাত্র ইস্রাফিল আহমেদ। চলমান হালনাগাদে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি এ কলেজপড়ুয়া ছাত্র। গতকাল জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ধর্ণা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এক এক করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করতে গিয়ে তার হাঁসফাঁস অবস্থা। এরিমধ্যে ভোটার হওয়ার সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। গতকাল দুপুরে ইস্রাফিলের মতো আরও কয়েক জন ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে ঘুরছেন নির্বাচন অফিসে। তারা বললেন, নতুন ভোটার হওয়ার জন্য অনেক ধরনের কাগজপত্র জোগাড় করতে হয়। এসব কাগজপত্র সংগ্রহ করতে করতে সময় শেষ হয়ে যায়। শেষে অনলাইনে আবেদন করেছেন। এখন কাগজপত্র জমা দিয়ে ছবি তোলার অপেক্ষায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমদ বলেন, ‘নগরে হালনাগাদের কার্যক্রম শেষে বায়োমেট্রিকের সব সরঞ্জাম উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। স্বল্পতার কারণে সব সরঞ্জাম একত্রিত করে চার উপজেলায় বায়োমেট্রিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পাঠানো হয়েছে।’
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, রোহিঙ্গা নাগরিকদের কারণে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ‘বিশেষ জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চট্টগ্রাম জেলা এবং কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলাকে বিশেষ জোন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এই পাঁচ জেলার বাসিন্দাদের ভোটার হতে ১৮ ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়। তবে পাঁচ জেলাকে বিশেষ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এবার বিশেষ ছাড়ও রয়েছে। তিন ক্যাটাগরির ভিত্তিতে ভোটার তালিকা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
ভোটার হতে যেসব কাগজপত্র লাগবে: ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মসনদের কপি। জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের কপি। নিকট আত্মীয়ের (পিতা-মাতা, ভাই-বোন প্রভৃতি) এনআইডির ফটোকপি। এসএসসি/দাখিল/সমমান অথবা অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানি/চৌকিদারি ট্যাক্স রশিদের ফটোকপি)।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলাকে রোহিঙ্গাপ্রবণ এলাকা হিসেবে বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করেছে সরকার। সেই হিসেবে একটু বেগ পেতে হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের তিন ক্যাটাগরির ভিত্তিতে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে জানান আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যাদের এসএসসি পরীক্ষার সনদ রয়েছে তারা ‘এ’ ক্যাটাগরির ভিত্তিতে ভোটার হতে পারবেন। তাদের জন্য অনেক শিথিল করা হয়েছে। যাদের সনদ নেই তাদের ‘বি’ ক্যাটাগরির মাধ্যমে ভোটার হবেন। তাদের জন্য একটু বেশি ডকুমেন্ট লাগছে। আর অন্যরা বিশেষ কমিটির যাচাই-বাছাই ও অনুমোদন সাপেক্ষে ভোটার হবেন।’
গত ২০ জানুয়ারি থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারযোগ্য নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ হয়। একই সঙ্গে মৃত ভোটারদের ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে নিবন্ধনকেন্দ্রে নিবন্ধন (বায়োমেট্রিক গ্রহণসহ) কার্যক্রম শুরু হয়। চলবে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত।
ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা নাগরিক: ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই রোহিঙ্গা নারী রমজান বিবি ওরফে লাকী আকতার এনআইডি কার্ড নিতে এসে ধরা পড়েন। এরপর রোহিঙ্গা নাগরিকের ভোটার হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। এছাড়াও ২০১৯ সালে টেকনাফে নিহত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নুর আলম (প্রকাশ নুরু ডাকাত) নগরীর জয়নাব কলোনি এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে এনআইডি নিয়েছিলেন। ৫৫ হাজার ৩১০ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়া হয়েছিল বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে ওঠে এসেছিল।
২০১৬ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকদের জালিয়াতির মাধ্যমে ভোটার করা হচ্ছে বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে উঠে এসেছিল। এরপর চট্টগ্রাম জেলাকে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকার। এখন ভোটার হতে গিয়ে এর খেসারত গুনছে চট্টগ্রামবাসী।
পাঠকের মতামত